দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দাবস্থা শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশীয় সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বাংলার দর্শক। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দিয়েও দর্শক ফেরানো যায়নি হলে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায় মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার মধ্যে করোনার ধাক্কা পঙ্গু ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে গেছে কোমায়।
করোনার প্রভাবে সাত মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেল ১৬ অক্টোবর খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের সব সিনেমা হল। খোলার পর মুক্তি পেয়েছে মাত্র দুটি সিনেমা। ‘সাহসী হিরো আলম’ এবং ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেও আশানুরূপ সাড়া পাননি হল মালিকরা। হতাশ হয়ে পুরনো দাবি নিয়ে ফের সোচ্চার তারা। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঘরোয়া সাক্ষাতে, আপৎকালীন সময়ে দশটি নতুন বিদেশি সিনেমা আমদানির সুযোগ চেয়েছেন তারা। দশটি হতে পারে বলিউডের সিনেমা কিংবা টলিউডের সিনেমা।
ভারতের সিনেমা এলেই দর্শক হলে ফিরবে? জানতে চাইলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদুল আলম খসরু শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সময় নিউজকে বলেন, ‘দাবিটি হল মালিকদের। ভারতের সিনেমা মুক্তি দিলে দর্শক হলে আসবে কিনা সে ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে সাফটা চুক্তির আওতায় আগে যে সিনেমাগুলো বাংলাদেশে এসেছে সেগুলো খুব একটা সফলতা পায়নি। এবার নতুন সিনেমা এট অ্যা টাইম মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।’
কবে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে এবং তিনি কী বলেছেন? জানতে চাইলে প্রযোজক সমিতির এ নেতা বলেন, ‘বুধবার (১১ নভেম্বর) প্রযোজক এবং প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মন্ত্রীর। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে তিনি একটি সিদ্ধান্ত দেবেন।’
তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘বেশকিছু দাবি নিয়ে আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। এর মধ্যে নতুন সিনেমা মুক্তির বিষয়টিও আছে। সব দাবি নিয়ে প্রদর্শক সমিতি এবং প্রযোজক সমিতি একসঙ্গে আগামী সোমবার (১৬ নভেম্বর) মন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানাব। আশা করি, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন্ত্রী আমাদের আবেদনটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবেন।’
দেশে ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও এ নিয়ে একাধিকবার দাবি তুলেছিলেন হল মালিকরা। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করেও সে দাবি কথা বলেছিলেন তৎকালীন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দিন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘সিনেমা হলগুলো বাঁচানোর জন্যই আমরা ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু দেশীয় সিনেমাকে অবহেলা করে ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে আমরা নই।’
এ ছাড়া ভারতীয় সিনেমা আদমানি এবং একই সঙ্গে দুই দেশে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে অনেক আগেই দাবি তুলেছিলেন মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) সময় নিউজকে তিনি বলেন, ‘দেশে নতুন সিনেমা নাই। সিনেমা ছাড়া হল বাঁচবে কী করে? এমনিতেই তো ঢাকার অধিকাংশ হল বন্ধ। মানহীন সিনেমা দিয়ে একটি ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকতে পারে না। বলিউডের সিনেমা আসতেই হবে। নইলে বাকি হলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে দেশে মুক্তি পেয়েছিল ৫৪টি সিনেমা। যার মধ্যে আমদানির ১০টি এবং যৌথ প্রযোজনার ছিল ২টি। আমদানির সিনেমাগুলোর মধ্যে একটিও সাফল্য পায়নি। এমনকি দেব, জিতের সিনেমাও পড়েছিল মুখ থুবড়ে। এদিকে দেশে মুক্তির অপেক্ষায় আছে বড় বাজেটের বেশকিছু সিনেমা। হলে দর্শক না আসায় সেগুলো মুক্তি দিচ্ছেন না প্রযোজকরা। এ বিষয়ে প্রযোজক সমিতির নেতা খসরু বলেন, ‘হল মালিকরা যে শর্তে সিনেমা চাচ্ছে সেভাবে কোনও প্রযোজক দেবে না। বড় বাজেটের সিনেমাগুলো মানি গ্যারান্টি না পেলে কোনও প্রযোজকরা রিস্ক নেবে না।’
-সময় নিউজ
Next Post
- Facebook Comments
- Disqus Comments