শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করলেই পুত্রবধূর হাতে পুলিশের উপহার

Share This:

নিউজ ডেস্ক:

শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করলেই উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন টাঙ্গাইলে কর্মরত এক পুলিশ অফিসার। এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে গিয়ে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন বলেওপুলিশের এই অফিসার বুধবার রাতে নিশ্চিত করেছেন।

উপহারের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট। সেই সঙ্গে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তার এমন উদ্যোগের কথা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই চারদিক থেকে ফোন আসছে, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন আর প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী নওশাদ রানা সানভী জানান, আমি নিউজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল সদর থানায় যাই। ভেতরে প্রবেশ করেই একটি ফেস্টুন আমার নজরে আসে। সেটিতে লেখা ছিল ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। সেখানে আরও লেখা ছিল- শ্বশুর শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে এবং একসঙ্গে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতিকে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া, যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর উল্লেখ্য করা ছিল। উদ্যোগটি ভালো লাগায় আমি ছবি তুলে ফেসবুক গ্রুপ টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে পোস্ট করি। বিষয়টি মানুষ ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করে এবং মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।

শহরের কলেজ পাড়া এলাকার গৃহবধূ শিউলি আক্তার জানান, আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মায়ের মতো ভালোবাসি এবং তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি পোস্টে উল্লেখিত নম্বরে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন।

সদর উপজেলার বাসা খানপুর এলাকার গৃহবধূ মাহমুদা আক্তার ও সাবালিয়া এলাকার তামান্না জাহান মিতু বলেন, আমরা দু’জনেই পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমারা শ্বশুর শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশোনা করি। ভবিষ্যতেও একই রকম তাদের সেবা করে যাবো।

কলেজ পাড়া এলাকার শিউলি কাজী মুজিবুর রহমান জানান, আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযত্নে কোন ত্রুটি করে না। এমন ছেলে বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান।

মাহমুদার শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও ছেলে বৌ আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বউমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন তার এমন উদ্যোগে নানা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি, বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় বাবা ও মা অযত্নে জীবন যাবন করেন। অনেকেই ঠিকমতো খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো এমন সন্তানেরা বাবা-মাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরাই ভুলে যায় এই বাবা-মা দিনরাত পরিশ্রম করে এই সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এও ভুলে যায় তাদের একদিন বৃদ্ধ হতে হবে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাইরে ব্যস্ত থাকে। তাদের বাবা-মা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। তাই আমার উদ্দেশ্য, ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা।

Loading...