কাজী নওশাবা আহমেদ:
মানুষের যেমন একটি জন্মদিন থাকে। একদিন সবাই ঘটা করে পালন করছি। আসলে কিন্তু মানুষ প্রতিদিনই ভালোবাসা পাচ্ছে। একটু একটু করে ভালোবাসা নিচ্ছে। প্রতিদিনই কিন্তু আমরা নিজেদের মতো করে নিজেদের জন্মটা উপভোগ করি। জন্মদিনটাকে উদযাপন করতে আসলে শুভ জন্মদিন বলা হয়ে থাকে।
আমরা যদি চিন্তা করি, ওয়েস্টার্নেই কিন্তু প্রথম বৃদ্ধাশ্রমের প্রচলন হয়। আমাদের এখানে কিন্তু এর প্রচলন আগে ছিল না। যেহেতু পাশ্চাত্যের প্রভাব আমাদের মাঝে ঢুকে গেল, যখন আমরা একা একা থাকা শুরু করলাম, যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে গেল, আমরা একেবারেই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম তখনই আমাদের মাথায় এলো পাশ্চাত্যে যেহেতু এমনটা আছে তা হলে আমরাও ঘটাতে পারি। আমাদের অবশ্যই পাশ্চাত্য থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, তাই বলে সব কিছুই তো আর ভালো নয়। আমরা কীভাবে বড় হয়েছি, আমাদের যে সংস্কৃতি, সে অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে।
পাশ্চাত্যের অনেক কিছুর সঙ্গেই আমাদের মিল নেই। যেমন আমাদের মাটির সঙ্গে তো ওদের মাটির মিল নেই। ওদের দেশে তো আপেল রাস্তায় পড়ে থাকে। আর আমাদের দেশে আপেল অনেক কষ্ট করে কিনতে হয়। ওদের দেশে আবার পেয়ারা পাওয়া যায় না। বিষয়গুলো আসলে আমাদের ভাবতে হবে। তাই বাবা-মা দিবস নিয়ে ভাবতে হবে। এখন তো দেখি, ফেসবুকে বাবা-মার সঙ্গে ছবি দিয়ে আমাদের দায়িত্ব পালন করে ফেলি।
ভালোবাসা দিবসটার বিরুদ্ধে আমি নই। কারণ একটা দিনে হলেও মানুষ ভালোবাসার কথা বলে। আমরা যদি চারদিকে তাকাই তা হলে দেখি ভালোবাসার উদাহরণ অনেক আছে। তার পরও ভালোবাসার চাইতে বিদ্বেষের কিংবা হিংসার উদাহরণই বেশি দেখি। যুদ্ধের উদাহরণই বেশি পাই, একটা দেশ আরেকটা দেশের পেছনে লেগে আছে। বর্তমানে কিন্তু আরও বেশি। তাই ভালোবাসা দিবসের অছিলায় যদি একজন আরেকজনকে ভালোবাসে তাতে দোষের কিছু নেই।
আমার কথাটা হচ্ছে, ভালোবাসা বলতে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার কথা বললেই হবে না। যদিও ভ্যালেন্টাইনের ইতিহাসের দিকে তাকালে কপোত-কপোতীর ইতিহাসই দেখতে পাই। এখন কিন্তু সেই ব্যাপ্তিটা অনেক বড় হয়েছে। বর্তমান সময়ে এসে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি যে জিনিসটার সেটা হলো ভালোবাসা। আমাদের মাঝে এখন সহমর্মিতার অভাব। এখন স্বার্থ ছাড়া কিন্তু আড্ডাও হচ্ছে না। এই যে আমরা এক গুমট পৃথিবীর বাসিন্দা। যেখানে চাইলেই অনেক কিছু হয়ে যাচ্ছে।
পুরো পৃথিবীর মানুষ কিন্তু নিরাপত্তাহীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কিন্তু অনেক মানুষই প্রমিজ করেছিল আর হানাহানিতে জড়াবে না। কিন্তু পরে ভুলে গেছে। আবার করোনার মধ্যেও কিন্তু মানুষ অনেক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাওয়ারফুল দেশগুলো যখন বিপর্যস্ত তখন কিন্তু অনেকেই বলছে করোনার পর অনেক কিছু পাল্টে যাবে। আমরা মৃত্যু অনেক কাছ থেকে দেখেছি। তার পরও যখন আমাদের চেতনা হয় না। তখন মনে হয় আমাদের সবচেয়ে বড় অভাব ভালোবাসা। তাই ভালোবাসা দিবসকেও একদিনের ঘেরাটোপে আটকে রাখা ঠিক নয়।
করোনার ভ্যাকসিন আসছে, কিন্তু আমরা যে ভালোবাসার অভাবে ভুগছি সেটার ভ্যাকসিন কে দেবে। আসুন আমরা আশপাশের সব কিছুকেই ভালোবাসতে শিখি। যেমন বাড়ির পাশের গাছটিকে ভালোবাসি। আশাপাশের কুকুরগুলোর প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেই। যেসব মানুষ কষ্টে আছে তাদের প্রতি ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিতে পারি। হানাহানি হয়তো কমাতে পারব না তবে চারদিকে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিলে কিছুটা হলেও কমে আসবে। আসুন সবাই ভালোবাসার ছায়াতলে মিলিত হই।