প্রেমের নামে ২২ বছর বয়সে ২০ নারীর সঙ্গে প্রতারণা, অতপর:
অনলাইন ডেস্ক:
ডিজিটাল দুনিয়াকে অবলম্বন করে প্রতারণার ভালোই ব্যবসা ফেঁদেছিলেন তানজিমুল ইসলাম (২২)। প্রতারণা ব্যবসার তাঁর প্রধান পুঁজি একটি আইফোন ও ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এই সব ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া থেকে একেকজন কিশোরী-তরুণীকে ‘শিকার’ বানাতেন বগুড়ার স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এই ছাত্র। দক্ষ শিকারির মতো একেকজনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আনতেন ভিডিও চ্যাটে। তারপর স্ক্রিন রেকর্ডার অ্যাপের মাধ্যমে ধারণ করতেন তাঁদের আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি।
প্রেমের ছুতোয় ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও ছবি ধারণ শেষ হলেই তানজিমুল সেসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন। পরিবারের লোকজন জেনে যাবেন বা লোকলজ্জার ভয়ে ওই কিশোরী-তরুণীরা বাধ্য হতেন তানজিমুলের প্রতারণার শিকার হতে। অনেক সময় গোপনে, অনেক সময় পরিবারের অভিভাবকদের জানিয়ে হলেও তাঁরা তানজিমুলের হাতে টাকা তুলে দিতেন। অনেকে তুলে দিতেন স্বর্ণালংকারও। বিনিময়ে তাঁদের আরজি থাকত ধারণ করা আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলার।
তানজিমুল সেসব তো মুছতেনই না, বরং প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে তাঁর ‘শিকার’ করা কিশোরী-তরুণীদের শিয়রে সংক্রান্তি হয়ে লেগে থাকতেন। ঠেলে দিতেন তাঁদের মানসিক বিপর্যয়ের দিকে। সবশেষে আপত্তিকর ভিডিও-ছবি ‘ভাইরাল’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বগুড়া শহরের এক স্কুলছাত্রীর কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা ছাড়াও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন, কিন্তু এবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। তা–ও এক পুলিশের মেয়েকেই আগের নিয়মেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে গিয়েই তাঁর এই ‘গৃহস্থের একদিন’ এসেছে।
প্রতারণার শিকার শেষজন স্কুলছাত্রী। তার মা বাদী হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়া সদর থানায় প্রতারণা ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই জেলা গোয়েন্দা শাখার সাইবার ইউনিট দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর থেকে অভিযুক্ত তানজিমুলকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ এ সময় তাঁর কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত আইফোনটিও জব্দ করেছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, তানজিমুলের আরেক নাম রিয়ন। তাঁর বাড়ি নওগাঁ সদরের চকদেবপাড়ায়। পড়াশোনা করছেন দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজে (জেকে কলেজ) বিবিএস প্রথম বর্ষে। বাবা মারা যাওয়ার পর তানজিমুলের মা অন্য একজনকে বিয়ে করেছেন। এরপর থেকে দুপচাঁচিয়া চৌধুরীপাড়া তিন মাথা এলাকায় নানার বাড়িতে থেকেই তিনি পড়াশোনা করেন। পারিবারিক টানাপোড়েন আর সঙ্গ দোষেই ওই তরুণ বখাটেপনাসহ এ ধরনের একের পর এক প্রতারণা কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন।
সুত্র: প্রথম আলো