টিনশেড থেকে অট্টালিকার মালিক এসআই আকবর!
অনলাইন ডেস্ক: সিলেটে রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পলাতক এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এসএসসি পাশ করেন সি-গ্রেডে। তাকে নিয়ে বাবা স্কুল শিক্ষক জাফর আলীর দুঃশ্চিন্তার শেষ ছিলো না। তবে সেই দুঃশ্চিন্তার মেঘ কাটতে শুরু করে আকবরের পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর থেকে। দিন বদলাতে শুরু করে জাফর আলীর। টিনশেডের ঘর হয়ে ওঠে অট্টালিকা।
২০১৪ সালে পিএসআই হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন আকবর হোসেন ভূঁইয়া। চাকরির মাত্র ৬ বছরের মাথায় হয়ে ওঠেন টাকার কুমির।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ বেড়তলার বগইর গ্রামে গড়ে তুলেন প্রাসাদসম বাড়ি। যদিও পরিবারের লোকজন বলেছেন, তার বাবার পেনশনের টাকা দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, জাফর মাস্টার পেনশনে আসেন প্রায় ১০ বছর আগে। ওই টাকায় এক ছেলেকে সিঙ্গপুর পাঠান। মূলত আকবরের মাধ্যমেই দিন বদলাতে শুরু করে পরিবারটির।
এলাকায় প্রতিবছর নতুন নতুন জায়গা, প্লট কিনে রাখেন আকবর। প্রাসাদসম বাড়িটির নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে সম্প্রতি।
স্থানীয়রা বলছেন, সিলেটে চাকরির সুবাদে আকবরের ভাগ্য খুলতে শুরু করে। এলাকায় যেই জায়গা বিক্রি করতে চান, কিনে নেন আকবর। এলাকায় নিম্নবিত্ত পরিবারটি কেবল আকবরের কারণেই এখন প্রভাবশালী ও দাপুটে হয়েছে।
সরেজমিন বেড়তলার বগইর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আশুগঞ্জ বন্দর এলাকা সংলগ্ন বাড়িতে নান্দনিক ডিজাইনের একতলা ভবন। বাড়ির চারদিক বাউন্ডারি করা হয়েছে। প্রবেশের মূল ফটক কারুকার্যে ভরপুর।
প্রথমে বাড়িতে ঢুকতে মানা করলেও কৌশলে অপর বাড়ির গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। কথা হয় আকবরে ছোট ভাই আরিফ হোসেন ভূইয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, গত শনিবারে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে ভাই বলেছে অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমার ফাঁড়িতে একজন লোক মারা গেছে। ঘরের সবাইকে বলিস আমার জন্য দোয়া করতে। এরপর থেকেই আমাদের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।
বাড়ি নির্মাণ খরচের বিষয়ে আরিফ হোসেন বলেন, বাড়িটি দুই ধাপে হয়েছে। আমার বাবা স্কুল শিক্ষক ছিল। অবসর যাওয়ার পর পেনশনের টাকা দিয়ে এই বাড়ি করা হয়েছে। এছাড়া আমার আরেক ভাই সিংগাপুরে রয়েছে। মূলত আমাদের বাড়িটা দাদার কেনা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন বলেন, আরিফ চাকুরিতে যোগ দেওয়ার পরেই তার বাড়ির পরিবেশ পাল্টাতে থাকে। আগে এমন ছিল না। টিনশেড ঘর ছিলো।
রায়হান হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়া সর্বশেষ টাকার খনি হিসেবে খ্যাত সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ছিলেন এক বছর ২ মাস। এ্ই সময়ের মধ্যে এলাকায় নামে-বেনামে অনেক জায়গা কিনেছেন তিনি। ব্যাংক ব্যালেন্সও করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের চাকরি পেয়ে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়ে যান আকবর। বড় কর্তাদের ম্যানেজ করেই বদলি হন বন্দর বাজার ফাঁড়িতে। প্রতিরাতে মাসোহারা ও দৈনিক কাঁচা টাকা আসতে থাকে। কখনো সন্দেহভাজন হিসেবে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন।
গত রোববার (১১ অক্টোবর) রায়হান উদ্দিন নিহত হন। রায়হান উদ্দিন সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার তিন মাসের এক মেয়ে রয়েছে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন।
পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ের অভিযোগে নগরীর কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান মারা যান। কিন্তু নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে রায়হান নিহত হন। মারা যাওয়ার পর রায়হানের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার হাতের নখও উপড়ানো ছিল। এ ঘটনার পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যার অভিযোগ এনে নিহতের স্ত্রী কোতোয়ালি থানার হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে এসআই আকবরসহ রায়হান হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে উত্তাল রয়েছে সিলেটের রাজপথ। রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী নেতাসহ সব শ্রেণীর মানুষ বিচারের দাবিতে প্রতিদিন মানববন্ধন করছেন।