কেরালার সিনেমা “দৃশ্যাম টু” এর স্ক্রিপ্ট লেখতে সময় লেগেছে ৫ বছর
অনলাইন ডেস্ক:
যীথু জোসেফ:
“দৃশ্যাম ২ এর স্ক্রিপ্ট লেখার পর আমি সবার প্রথমে শোনাই কেরালার একজন সিনিয়র ফরেনসিক অফিসারকে। দুই তিনটা জায়গায় তিনি নিজের অব্জারভেশন দেন। আমি সেগুলো ঠিক করি। এরপরে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি- একটা মানুষ ৬ বছর ধরে যদি এভাবে প্ল্যান করে, সে কি সবাইকে ফাঁকি দিতে পারে? এটা কি সম্ভব? ফরেনসিন অফিসার বললেন- আপনি যেভাবে লিখেছেন, এটা সম্ভব।
আমি তখনই বুঝে গেলাম আমি একটা ভাল স্ক্রিপ্ট লিখেছি। সিনিয়র ফরেনসিক অফিসার যদি ভুল বের করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে আমি আমার কাজে ফাঁকি দেইনি।
এরপরে আমি স্ক্রিপ্টটা আমার তিন মেয়েকে পড়তে দেই। তিনজনকেই একই সাথে পড়তে দেই, আলাদা সময়ে না। সবাইকে স্ক্রিপ্ট হাতে দিয়ে যার যার রুমে পাঠিয়ে দেই আর পড়া শেষে রিএকশন জানাতে বলি। শুরুতে তিনজনই আমার উপরে কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিল আর তারা বলেছিল- বাবা! কি দরকার এই সিনেমার সিকুয়েলের? প্লিজ প্রথমটার আবেদন নষ্ট কইর না। কোন দরকার নাই সিকুয়েল করার।
স্ক্রিপ্ট পড়া শেষে আমার তিন মেয়েই আমাকে বলল- বাবা! চমৎকার একটা স্ক্রিপ্ট হইসে!
খেয়াল করে দেখবেন সিনেমার একটা দৃশ্যে মোহনলাল মানে জর্জকুট্টি বলে- এই ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই তো? এই ডায়লগটা আমি ইচ্ছে করে রেখেছি কারণ কেরালার অনেক সরকারি ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে আসলেই সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। শুধু তাই না, সরকারি ফরেনসিক অফিসের এক দারোয়ান বেশ কয়েকমাস আগে এখানে রাতেরবেলা মদের আসর বসিয়েছিল, নিউজেও এসেছিল সেটা। সেখান থেকে সিনেমার মদখোর দারোয়ানের ক্যারেক্টর ইন্সপিরেশন নিয়েছিলাম আমি।
৫ বছর ধরে আমি শুধু সিনেমার স্ক্রিপ্ট ভেবেছি আর নিজের মাথায় সাজিয়েছি। একটা বর্ণও লিখিনি। লেখালেখির ব্যাপারে আমি খুবই অলস প্রকৃতির। শেষমেষ পুরো সিনেমার স্ক্রিপ্ট যখন নিজের মাথায় সাজিয়েছি, তখনই সেটা লিখতে বসেছি। করোনার মাঝে লিখেছি পুরোটা, লকডাউনে টানা ২৫ দিন বসে লেখা শেষ করেছি।
বক্স অফিস কালেকশনের জন্য আমি দৃশ্যাম ২ বানাইনি। সেটা করলে অনেক আগেই তিন চারটা দৃশ্যাম বানাতে পারতাম। আমি দৃশ্যাম ২ বানিয়েছি আমার ক্রিয়েটিভ স্যাটিসফেকশনের জন্য। হয়ত এই কারণেই দর্শক বেশি পছন্দ করেছেন। আমি কখনোই দর্শককে বোকা ভাবিনা, নিজের চেয়ে চালাক ভাবি। সো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কীভাবে এত চালাক দর্শককে লজিক্যালি বোকা বানানো যায়।
দৃশ্যাম ৩ এর ক্লাইমেক্স লিখেছি শুধু আমি। সেটা আমি মোহনলালকে শুনিয়েছি। তিনি এক বাক্যে সিনেমা করতে রাজি হয়েছেন শুধু ক্লাইমেক্স শুনেই। আমার তিন মেয়ে ক্লাইমেক্স শুনে বলেছে- বাবা, এর চেয়ে চমৎকার ক্লাইমেক্স আর হয় না! কিন্তু তুমি এটা করবে কীভাব? বাকি পুরো গল্প কীভাবে সাজাবে?
কন্যাদের প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। তবে আমি চেষ্টা করব। চেষ্টায় সফল হলেই দৃশ্যাম ৩ নিয়ে হাজির হব!”
– যীথু জোসেফ, লেখক ও নির্মাতা