এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া ডাক্তার পদবি ব্যবহার করা যাবে না – হাইকোর্ট
অনলাইন ডেস্ক:
২০১০ সালের বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
এমবিবিএস–বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি সংযোজনের অনুমতি দেওয়া বেআইনি।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৯ নভেম্বর এই রায় দেন। ৭১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।
ওই রায়ে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী হোমিও, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ ‘বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি’কে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ দিয়ে সেজন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য পৃথক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন ও বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থায় ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ (রুল খারিজ) করে দেওয়া রায়ে এই অভিমত দিয়েছেন আদালত। প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসাপদ্ধতির পৃথক মন্ত্রণালয় তথা ‘ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রণালয়’–এর আদলে দেশে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করাসহ চার দফা পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ও সেবার মান নির্ধারণের জন্য ‘বিকল্প চিকিৎসা’ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সনদের স্বীকৃতিও দিতে বলা হয়েছে।
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকরা নমের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে একটি রিট মামলার রায়ে এ পরামর্শ এসেছে।
তবে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করার অনুমতি হাই কোর্ট দেয়নি।
বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও এ পদ্ধতির চিকিৎসকরা যাতে নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবী ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গতবছর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ৯৬ জন চিকিৎসক হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত বছর ১ জানুয়ারি রুল জারি করে।
পেশাগত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির (হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদসহ অন্যান্য) চিকিৎসকেদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারে আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠন ও নীতিমালা তৈরিতে ‘বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি’ ঘোষণা করা হবে না এবং বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন ও আলাদা নীতিমালা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
শুনানির পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর রুল খারিজ করে রায় ঘোষণা করা হয়। সে রায়টি বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীদের পক্ষে রুল শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশনা ইমাম, খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন ও মো. মজিবর রহমান।
বিএমডিসির পক্ষে রুল শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম, সাকিবুজ্জামান, কাজী ইরশাদুল আলম ও ইমরান আনোয়ার। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী তাপস কুমার বিশ্বাস।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইলিন ইমন সাহা, সায়রা ফিরোজ ও মাহফুজুর রহমান লিখন।