ইমরান খানকে পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা

Share This:

অনলাইন ডেস্ক:

তোশাখানা মামলায় মিথ্যা বিবৃতি জমা দেওয়ায় পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ ইসলামাবাদে ইসিপি সচিবালয়ে এই রায় ঘোষণা করেন। খবর ডনের।

সংবিধানের ৬৩ (১) (পি) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি আপাতত বলবৎ কোনো আইনের অধিনে মজলিস-ই-শূরা (সংসদ) বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বা নির্বাচিত হওয়ার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, এই ঘোষণার জন্য পাঞ্জাবের সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।

রায়ে বলা হয়েছে, ভুল ঘোষণার জন্য ইমরানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু হবে।

রায় ঘোষণার পরপরই পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী ইসিপির বাইরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় জনসাধারণকে ‘তাদের অধিকার আদায়ের জন্য’ রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। ইসিপির এই রায়কে তিনি ‘২২ কোটি মানুষের মুখে চপেটাঘাত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে বিপ্লবের সূচনা হলো।’

ফাওয়াদ চেীধুরি আরও বলেন, ‘জনগণ ছাড়া কেউই ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারেন না। আজকের রায় নওয়াজ শরীফ লিখেছেন এবং তার ভৃত্যরা স্বাক্ষর করেছেন। এই রায় জনগণ প্রত্যাখ্যান করে।’

তার পাশাপাশি পিটিআই নেতা শাহবাজ গিল বলেছেন, পিটিআই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিটি ফোরামে যোগাযোগ করবে। ইমরানকে শুধু একটি আসন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, রাজনীতি থেকে নয়।

রায়ের আগে ইসিপিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বলে ডন জানিয়েছে।

তোশাখানা উপহার এবং তাদের কথিত বিক্রয় থেকে আয়ের ‘বিশদ ভাগ না করার’ জন্য জোট সরকার ইমরানের বিরুদ্ধে আগস্টে মামলা দায়ের করেছিল। ক্ষমতাসীন জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের আইন প্রণেতারা জাতীয় পরিষদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফের কাছে রেফারেন্স জমা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি সেটি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজার কাছে পাঠিয়েছিলেন।

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তোশাখানা হলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন একটি বিভাগ। এটি অন্যান্য সরকার, রাজ্যের প্রধান এবং বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শাসক, সংসদ সদস্য, আমলা এবং কর্মকর্তাদের দেওয়া মূল্যবান উপহার সংরক্ষণ করে।

তোশাখানার নিয়ম অনুসারে, যেসকল ব্যক্তিরা এই ধরণের উপহার পাবেন সেগুলো তারা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে রিপোর্ট করে জানাবেন। অন্যথায় তাদের ওপর আইন প্রয়োগ করা হবে।

২০১৮ সাল থেকে পিটিআই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাওয়া উপহারগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেওয়া হয়নি। তখন বলা হয়েছিল উপহারের বিস্তারিত প্রকাশ করা হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়বে। স্বয়ং পাকিস্তান তথ্য কমিশন (পিআইসি) বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু পিটিআই সরকার সেটি মান্য করেনি।

কিন্তু পরবর্তীতে ৮ সেপ্টেম্বর ইসিপিতে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার প্রাপ্ত কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছিলেন।

প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ২ কোটি ১০ লাখ ৫৬ হাজার রুপি প্রদানের পরে যে উপহারগুলি সংগ্রহ করেছিলেন তা বিক্রি করে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ রুপি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক উপহারে একটি গ্রাফ ঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিঙ্ক, একটি দামী কলম এবং একটি আংটি এবং অন্য তিনটি উপহারের মধ্যে ছিল চারটি রোলেক্স ঘড়ি।

Loading...